নাম | নরেন্দ্রনাথ দত্ত (স্বামী বিবেকানন্দ) |
বাবার নাম | বিশ্বনাথ দত্ত |
মায়ের নাম | ভুবনেশ্বরী দেবী |
জন্ম | 12th January, 1863 (২৯শে পৌষ, ১২৬৯ বঙ্গাব্দ) |
জন্মস্থান | কলকাতা |
মৃত্যু | 4th July, 1902 |
মৃত্যুস্থান | বেলুড় মঠ, হাওড়া |
আদি নিবাস | বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমার ডেরেটোনা গ্রাম |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
ধর্ম | হিন্দু |
বিভিন্ন নাম | বিবিদিসানন্দ, সচ্চিদানন্দ, বিবেকানন্দ |
প্রতিষ্ঠাতা | রামকৃষ্ণ মিশন, রামকৃষ্ণ মঠ, বেলুড় মঠ |
ধর্মগুরু | রামকৃষ্ণ |
সন্ন্যাস গ্রহণ | January, 1887 |
দর্শন | অদ্বৈতবাদ বেদান্ত, রাজযোগ |
সাহিত্যকর্ম | রাজযোগ, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ, জ্ঞানযোগ, মদীয় আচার্যদেব, ভারতে বিবেকানন্দ |
শিষ্য | অশোকানন্দ, বিরজানন্দ, পরমানন্দ, আলাসিঙ্গা, পেরুমল, অভয়ানন্দ, ভগিনী নিবেদিতা, সদানন্দ |
প্রভাবিত হয়েছেন | সুভাষচন্দ্র বসু, অরবিন্দ ঘোষ, মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জহরলাল নেহেরু, নিকোলা টেসলা, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, অ্যানি বেসান্ত, নরেন্দ্র মোদি |
Swami Vivekananda Biography In Bengali:
ভারতবর্ষের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান যিনি তার ছোট্ট জীবন কালে বিভিন্ন
কর্মের জন্য সুখ্যাতি অর্জন করেন এবং শুধু ভারত বর্ষ নয় বিদেশেও যার জ্ঞান
ও মন্তব্য সমান রুপে প্রসিদ্ধ তিনি হলেন স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda prabandha rachana in Bengali)।
স্বামী বিবেকানন্দ ভারতবর্ষের আধ্যাত্বিক উত্থান অর্থাৎ Spiritual Enlightenment এর জন্য প্রচুর কাজ করেন।
19 শতাব্দীর ভারতীয় মহাপুরুষ রামকৃষ্ণ
পরমহংসর শিষ্য হন এবং ভারতীয় সাহিত্য, সংস্কৃতির চেতনা সারাবিশ্বে পৌঁছে
দেওয়ার জন্য বিশ্বের দরবারে হিন্দু ধর্ম প্রচার করেন।
তিনি গরীব দুঃখী মানুষকে সাহায্য করার জন্য রামকৃষ্ণ মিশন স্থাপন করেন।
এক কথায় বলতে গেলে, স্বামী বিবেকানন্দ
ছিলেন একজন ঋষি বা সাধু এবং যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন উজার করে আমাদের দিয়ে
গিয়েছেন ইহজগতে অর্জিত তাঁর সমস্ত জ্ঞান, শিক্ষা, অভিঞ্জতা এবং আধ্যাত্মিক
চিন্তা ধারা। Swami Vivekananda Biography In Bengali থেকে আমরা অনেক কিছু
শিখতে পারি।
স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী, Swami
Vivekananda Biography in Bengali, স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী রচনা, Essay
on Swami Vivekananda in Bengali language, Swami Vivekananda Essay in
Bengali, স্বামী বিবেকানন্দ প্রবন্ধ রচনা, Swami Vivekananda Paragraph in
Bengali
স্বামী বিবেকানন্দের সংক্ষিপ্ত জীবনী
Swami Vivekananda Jibon Kahini Bangla
জন্ম
Date of birth of Swami Vivekananda
1863 খ্রিস্টাব্দের 12th January (২৯শে পৌষ ১২৬৯ বঙ্গাব্দ) পৌষ সংক্রান্তির দিন সকল 6 টা 33 মিনিট 30 সেকেন্ডে স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম হয়।
Date of birth of Vivekanand is 12th January
তার মায়ের বিশ্বাস ছিল কাশির বীরেশ্বর
শিবের অনুগ্রহে এই পুত্রলাভ। তাই পুত্রের নাম রাখেন ‘বীরেশ্বর’। বীরেশ্বর
থেকে ডাকনাম দাঁড়ায় ‘বিলে’।
পরিবার পরিচয়
Swami Vivekananda Family
স্বামী বিবেকানন্দের পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমার ডেরেটোনা গ্রামে।
ব্রিটিশ আমলের শুরুতে তারা কলকাতায় চলে আসেন – প্রথমে গড় গোবিন্দপুরে, পরে উত্তর কলকাতার সিমলায়।
রামমোহনের জ্যেষ্ঠপুত্র দুর্গাপ্রসাদ কুড়ি বাইশ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়ে যান। পুত্র বিশ্বনাথ তখন শিশু।
নিজের চেষ্টায় বড় হয়ে ওঠেন ও অ্যাটর্নির পেশা গ্রহণ করেন।বিশ্বনাথের বিবাহ হয় সিমলার নন্দলাল বসুর একমাত্র কন্যা ভুবনেশ্বরী দেবীর সঙ্গে।
ষষ্ঠ সন্তান নরেন্দ্রনাথ দত্ত তিনি পরবর্তীকালে স্বামী বিবেকানন্দ নামে পরিচিত হন।তাদের
স্বামী বিবেকানন্দের বাবার নাম কি?
Swami Vivekananda Father Name
স্বামী বিবেকানন্দের বাবার নাম বিশ্বনাথ দত্ত।বিশ্বনাথ দত্ত অত্যন্ত উদার প্রকৃতির মানুষ ছিলেন।
খাদ্য, পোশাক ও আদব কায়দায় তিনি ছিলেন হিন্দু-মুসলিম মিশ্র সংস্কৃতির অনুরাগী এবং কর্মক্ষেত্রে অনুসরণ করতেন ইংরেজদের।
বিশ্বনাথ দত্ত সাতটি ভাষায় দক্ষ ছিলেন। ইতিহাস ও সংগীত ছিল বিশ্বনাথের প্রিয় বিষয়।
স্বামী বিবেকানন্দের মায়ের নাম কি?
Swami Vivekananda Mother Name
স্বামী বিবেকানন্দের মায়ের নাম ভুবনেশ্বরী দেবী।
ভুবনেশ্বরী দেবী সব অর্থেই ছিলেন বিশ্বনাথের যোগ্য সহধর্মিনী। তার প্রতি পদক্ষেপে প্রকাশ পেত ব্যক্তিত্ব ও অভিজাত্য।
গরীব দুখীরা কখনো তার কাছে থেকে খালি
হাতে ফিরতে না। সংসারের সমস্ত কাজ তিনি নিজে দেখতেন এবং নিয়মিত পূজা পাঠ,
শাস্ত্র পাঠ ও সেলাইয়ের কাজ করতেন।
নরেন্দ্রনাথ তার মায়ের কাছেই প্রথম ইংরেজি শেখেন।
স্বামী বিবেকানন্দের ছোটবেলা
Swami Vivekananda Childhood
ছোটবেলা থেকে বিলের মধ্যে দেখা যেত
অসাধারণ মেধা, তেজস্বিতা, সাহস, স্বাধীন মনোভাব, হৃদয়বত্তা, বন্ধু প্রীতি
আর খেলাধুলার প্রতি আকর্ষণ।
সেই সঙ্গে ছিল প্রবল আধ্যাত্বিক তৃষ্ণা। ‘ধ্যান ধ্যান’ খেলতে খেলতে সত্যিই গভীর ধ্যানে ডুবে যেতেন।ঘুমানোর আগে জ্যোতিঃ দর্শন ছিল তার প্রতিদিনের স্বাভাবিক অভিজ্ঞতা।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নরেন্দ্রনাথ
হয়ে উঠলেন স্কুলের বিতর্ক ও আলোচনা সভার মধ্যমণি, খেলাধুলাতে নেতা,
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও ভজনে রীতিমতো প্রথম শ্রেণীর গায়ক, নাটকে কুশলী অভিনেতা,
আর বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার ফলে অল্প বয়সেই গভীর চিন্তাশীল।
সন্ন্যাস জীবনের প্রতি আকর্ষণ
ক্রমবর্ধমান, কিন্তু জগতের প্রতি নিষ্ঠুর নন, ছিলেন গভীর মমতাশীল। মানুষের
বিপদে আপদে সর্বদা এগিয়ে যেতেন, সে বিপদ যেমনই হোক।
Swami Vivekananda Biography in Bengali
শিক্ষাজীবন
১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে মেট্রোপলিটন স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পাশ করে নরেন্দ্রনাথ প্রথমে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন।
কিন্তু ম্যালেরিয়ায় ভুগে ডিসকলেজিয়েট
হয়ে যাওয়ায় এই কলেজ ছেড়ে তাকে ভর্তি হতে হয় জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ
ইন্সটিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ)।
সেখান থেকে ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে এফ.এ. এবং ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে বিএ পাস করেন।
স্কুল কলেজের পরীক্ষা কে বিশেষ গুরুত্ব না দিলেও নরেন্দ্রনাথের বিদ্যানুরাগী ছিল প্রবল এবং পড়াশোনার পরিধিও ছিল অত্যন্ত বিস্তৃত।
ছাত্রাবস্থাতেই তিনি দার্শনিক হার্বাট
স্পেন্সারের একটি মতবাদের সমালোচনা করে তাকে চিঠি দিয়েছিলেন এবং স্পেন্সার
তার উপরে নরেন্দ্রনাথের যথেষ্ট প্রশংসা করে লিখেছিলেন যে বই এর পরবর্তী
সংস্করণে তিনি সেই সমালোচনা অনুযায়ী কিছু কিছু পরিবর্তন করবেন।
কলেজের অধ্যক্ষ উইলিয়াম হেস্টি পর্যন্ত
তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, “নরেন্দ্রনাথ সত্যিই একটি জিনিয়াস।
আমি বহু জায়গায় ঘুরেছি, কিন্তু এর মত বুদ্ধি আর বহুমুখী প্রতিভা কোথাও
দেখিনি, এমনকি জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দর্শনের নয়।”
Ramkrishna and Swami Vivekananda
১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে (সম্ভবত ৬ নভেম্বর) কলকাতায় সুরেন মিত্রর বাড়িতে শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramkrishna) র সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়।
দ্বিতীয় দর্শন দক্ষিণেশ্বরে। নরেন্দ্রনাথ সেদিন সরাসরি প্রশ্ন করেন শ্রীরামকৃষ্ণকে, যা তিনি এর আগেও অনেক কে করেছিলেন :
নরেন্দ্রনাথ – আপনি কি ঈশ্বর দর্শন করেছেন?
রামকৃষ্ণ – হ্যাঁ, আমি তাকে দেখতে পাই, তোমায় যেমন দেখি, তার চেয়েও স্পষ্ট ভাবে তাকে দেখি। তুমি যদি দেখতে চাও, তোমাকেও দেখাতে পারি।
স্তম্ভিত হয়ে গেলেন নরেন্দ্রনাথ। এই প্রথম দেখলেন এমন একজন মানুষকে, যিনি ঈশ্বরকে দেখেছেন; শুধু তাই নয়, অন্যকেও দেখাতে পারেন।
কিন্তু সহজে তাঁকে মেনে নেননি
নরেন্দ্রনাথ। বারবার পরীক্ষা করে যখন নিঃসংশয় হয়েছেন তার ত্যাগ,
প্রবিত্রতা ও আধ্যাত্মিকতা সম্বন্ধে, কেবল তখনই তাকে জীবনের পথ প্রদর্শক
হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
তার এই যাচাই করার প্রবণতা সবচেয়ে খুশি
করেছিল শ্রীরামকৃষ্ণকেই, যিনি কিন্তু প্রথম থেকেই বুঝেছিলেন, নরেন্দ্রনাথ
একদিন বিশ্ব দরবারে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি কে মেলে ধরবে।
নরেন্দ্রনাথ শ্রীরামকৃষ্ণের ঘনিষ্ঠ
সঙ্গলাভ করেন প্রায় চার বছর। এই চার বছরে শ্রীরামকৃষ্ণের শিক্ষায় এবং তার
নিজের যোগ্যতা গুণে নানান আধ্যাত্বিক অনুভূতি হয়েছে তার।
তিনি প্রচন্ড আর্থিক কষ্টের মধ্যে পড়েন। কিন্তু এজন্য তার বিবেক বৈরাগ্য একটুকুও কমেনি।
শ্রীরামকৃষ্ণের দেহত্যাগ
১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে রামকৃষ্ণের ক্যান্সার হয়।চিকিৎসার জন্য প্রথমে তাকে আনা হয় শ্যামপুকুরে, পরে কাশীপুরের এক ভাড়া বাড়িতে।
এই বাড়িতে এসে নরেন্দ্রনাথ গুরুভাইদের নিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের সেবা ও তীব্র আধ্যাত্বিকতায় ডুবে গেলেন।
একদিন তিনি শ্রীরামকৃষ্ণকে জানালেন যে,
শুকদেবের মত দিনরাত তিনি নির্বিকল্প সমাধি তে ডুবে থাকতে চান। কিন্তু শ্রী
রামকৃষ্ণ বললেন: তাকে শুধু নিজের মুক্তি চাইলেই হবে না, তাকে হতে হবে বিশাল
বট গাছের মতো, যার ছায়ায় এসে পৃথিবীর মানুষ শান্তি লাভ করবে।
এই কথা বললেও তার কৃপায় কাশিপুরই নরেন্দ্রনাথ একদিন ধর্ম জীবনের সর্বোচ্চ উপলব্ধি নির্বিকল্প সমাধি লাভ করেন।
সমাধি ভাঙলে শ্রীরামকৃষ্ণ তাকে বলেন: এই
উপলব্ধির চাবি তিনি এখন নিজের কাছে রেখে দিলেন। জগতের প্রতি নরেন্দ্রনাথের
কর্তব্য যখন শেষ হবে তখনই তিনি নিজে হাতে এই উপলব্ধির দ্বার আবার খুলে
দেবেন।
কাশীপুরে শ্রীরামকৃষ্ণ একদিন একটি কাগজে লিখে দেন: “নরেন শিক্ষা দেবে।” অর্থাৎ ভারতের যে শাশ্বত আধ্যাত্মিক আদর্শ তিনি নিজের জীবনে রূপায়িত করেছেন, নরেন্দ্রনাথই তা জগতে প্রচার করবেন।
নরেন্দ্রনাথ আপত্তি জানালে শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন: “তোর হাড় করবে।” অর্থাৎ বিবেকানন্দকেই করতে হবে।
নরেন্দ্রনাথের সাথে একদিন বৈষ্ণব ধর্ম সম্বন্ধে আলোচনা করতে গিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন: “জীবে দয়া নয়, শিবজ্ঞানে জীব সেবা।”
নরেন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়ে বলেন, “কি অদ্ভুত আলো আজ ঠাকুরের কোথায় পেলাম।…ভগবান যদি কখনো দিন দেন তো আজ যা শুনলাম, এই অদ্ভুত সত্য সংসারের সর্বত্র প্রচার করব।”
পরবর্তীকালে স্বামীজি যে মানুষের সেবার মধ্য দিয়েই ভগবানের উপাসনার কথা এত করে বলতেন, তার উৎস হচ্ছে এই ঘটনাটি।
বস্তুত, স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিটি কাজই শ্রীরামকৃষ্ণ নির্দেশিত। শ্রীরামকৃষ্ণ সূত্র, স্বামীজি তাঁর ভাষ্য।
সন্ন্যাসী গুরু ভাইদের নিয়ে একটি সংঘ প্রতিষ্ঠার নির্দেশও শ্রীরামকৃষ্ণ নরেন্দ্র কে দিয়ে যান। যার ফল হল আজকের রামকৃষ্ণ মিশন।
রামকৃষ্ণ মঠ প্রতিষ্ঠা
এর কিছুদিন পর নরেন্দ্রনাথ কয়েকজন গুরু ভাইকে নিয়ে বরানগরের একটি পুরনো ভাঙ্গা বাড়িতে প্রথম শ্রী রামকৃষ্ণ মঠ প্রতিষ্ঠা করেন।
চরম দারিদ্র্য, অনশন ও অর্ধাশন নিত্যসঙ্গী ছিল তাদের। তার মধ্যেও তীব্র তপস্যা, ভজন কীর্তন ও শাস্ত্র আলোচনায় তাদের দিন কাটতো।
সন্ন্যাস গ্রহণ
১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে নরেন্দ্রনাথ ও তার দশজন গুরু ভাই সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। নরেন্দ্রনাথের নাম হয় স্বামী বিবিদিষানন্দ।
স্বামী বিবেকানন্দের বিভিন্ন নাম
আত্মগোপন করার জন্য স্বামীজি বিভিন্ন নাম নিয়ে চলতেন। যেমন – বিবিদিষানন্দ, সচ্চিদানন্দ, বিবেকানন্দ।শিকাগো মহাসভায় ‘বিবেকানন্দ’ নামে আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে সেই নামেই বিশ্ববাসী তাকে চেনেন।
পরিব্রাজক বিবেকানন্দ
সন্ন্যাস গ্রহণের পর স্বামী বিবেকানন্দ ও
তার সন্ন্যাসী গুরু ভাইয়েরা মাঝেমাঝেই পরিব্রাজক হিসাবে বেরিয়ে পড়তেন।
কখনো একাকী, কখনো কয়েকজন মিলে।
ভারত ভ্রমণ
এইভাবে পায়ে হেঁটে স্বামীজি প্রায় সারা ভারত পরিক্রমা করেন।
শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-নির্ধন, রাজা-মহারাজা, ব্রাহ্মণ, চন্ডাল প্রভৃতি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
তার প্রতিভা, তেজোদীপ্ত আকর্ষণীয়
কান্তি এবং আধ্যাত্মিক প্রভাবে সকলেই মুগ্ধ হন। ভ্রমণকালে তিনিও প্রকৃত
ভারতবর্ষের রূপটি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন।
বিদেশ যাত্রা
১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ৩ রা আগস্ট তিনি যে ভ্রমণে বের হন, সেটিই ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ কালের। এই ভ্রমণকালে তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে অনেকেই তাঁকে আমেরিকার বিশ্বধর্ম মহাসভায় যোগ দিতে অনুরোধ করেন।
বিবেকানন্দ প্রথমে এ নিয়ে মাথা ঘামান
নি। পরে মাদ্রাজের জনগণের ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং দৈব নির্দেশে (সূক্ষ্ম দেহে
শ্রীরামকৃষ্ণ তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তার চিঠির উত্তরে শ্রীমা সারদা
দেবীও তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন) আমেরিকায় যাওয়া স্থির করেন।
আমেরিকা যাত্রা
স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকায় গিয়েছিলেন
ভারতের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হয়ে তাদেরই অর্থ সাহায্যে। তিনি নিজেও
তাই চেয়ে ছিলেন। বলেছিলেন: “যদি এটা মায়ের ইচ্ছা হয় যে, আমায় (আমেরিকা)
যেতে হবে, তাহলে আমি সাধারণ মানুষের অর্থেই যাব। কারণ, ভারতের সাধারণ
মানুষের জন্যই আমি পাশ্চাত্য দেশে যাচ্ছি – সাধারণ এবং গরিব মানুষের
জন্যে।”
১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মে স্বামী বিবেকানন্দ বোম্বাই থেকে জাহাজে আমেরিকা যাত্রা করেন। ভ্যাঙ্কুবরে পৌছান ২৫ জুলাই।ধর্মমহাসভার দেরি আছে জেনে কম খরচে থাকার জন্য স্বামীজি বস্টনে চলে যান।
বস্টনে তিনি বিভিন্ন পন্ডিত ও অধ্যাপকের
সংস্পর্শে আসেন। এরে মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হার্ভার্ড
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাইট। স্বামীজীর নামে কোন পরিচয় পত্র নেই জেনে
অধ্যাপক রাইট ধর্ম মহাসভা কমিটির চেয়ারম্যান ডঃ ব্যারোজকে একটি চিঠি
লিখেন: “আমাদের সব অধ্যাপককে সম্মিলিত করলে যা হবে এই সন্ন্যাসী তারচেয়েও
বেশি পন্ডিত।”
Swami Vivekananda life story in Bengali
শিকাগো বক্তৃতা
১১ ই সেপ্টেম্বর ধর্ম মহাসভা শুরু হল।
স্বামী বিবেকানন্দ বক্তৃতা দিলেন বিকেলে। ‘আমেরিকার বোন ও ভায়েরা‘ (Brothers and Sisters of America)
এই সম্বোধন করার সঙ্গে সঙ্গে সবার সাত হাজার শ্রোতা তাকে বিপুল অভিনন্দন
জানাল। এরপর স্বামীজি একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। তাতে সব ধর্মের প্রতি তার
উদার প্রীতিপূর্ণ মনোভাবের অপূর্ব প্রকাশ দেখে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়।
রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন স্বামীজী।
২৭ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলল ধর্ম মহাসভা।
তাকে প্রায় প্রতিদিনই বক্তৃতা দিতে হত।
তোর উদার যুক্তিমূলক চিন্তার জন্য সকলেই তাকে ধর্ম মহাসভার শ্রেষ্ঠ বক্তা
হিসাবে স্বীকার করে নেন। শিকাগোর রাস্তায় রাস্তায় সভাপতি থাকে স্বামী
বিবেকানন্দের ছবি।
স্বামীজীর শিকাগো ভাষণ
ধর্ম প্রচার
আমেরিকায় ধর্মপ্রচার
এরপর স্বামীজি আমেরিকার বড় বড় শহরে
ধর্ম প্রচার করতে থাকেন। আমেরিকার জনসাধারণ, বিশেষ করে শিক্ষিত সম্প্রদায়,
আরো বেশি করে তার অনুরাগী হয়ে ওঠে।
শুভ সংকীর্ণমনা কয়েকজন ভারতীয় ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কিছু লোক ঈর্ষা পরবশ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা বিষোদগার করতে থাকে।
সাময়িকভাবে বিপন্ন হলেও স্বামীজির নিজের চরিত্র মাহাত্ম্যে সব ঝড়ঝাপটা কাটিয়ে ওঠেন।ইংল্যান্ডে ধর্মপ্রচার
দু বছর পরে ১৮৯৫ এর আগষ্ট মাসে তিনি ইউরোপে যান।প্যারিস ও লন্ডনে প্রচার করে ডিসেম্বর মাসে আবার আমেরিকায় ফিরে আসেন।
১৮৯৬ এর ১৫ই এপ্রিল আমেরিকা থেকে বিদায় নিয়ে আবার লন্ডনে আসেন।
ইংল্যান্ডের স্বামীজীর প্রভাব সম্পর্কে বিপিনচন্দ্র পাল একটি চিঠিতে লিখেছেন: “ইংল্যান্ডের
অনেক জায়গায় আমি এমন বহু লোকের সান্নিধ্যে এসেছি যারা স্বামী
বিবেকানন্দের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি পোষণ করেন। সত্য বটে, আমি তাঁর
সম্প্রদায়ভুক্ত নয় এবং তার সঙ্গে কোন কোন বিষয়ে আমার মত ভেদ আছে, তথাপি
আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, বিবেকানন্দের প্রভাব গুণে এখনে ইংল্যান্ডে
অনেকের চোখ খুলছে…। তাঁর শিক্ষার ফলেই এখানকার অধিকাংশ লোক আজকাল বিশ্বাস
করে যে, প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্র গুলির মধ্যে বিস্ময়কর আধ্যাত্মিক তত্ব
নিহিত আছে।”
কলকাতায় ফিরে আসা
পাশ্চাত্যে তাঁর অভাবনীয় সাফল্য
দেশবাসীদের মনে যে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা জাগিয়ে তুলেছিল, তাতে তাদের
বহুযুগ সঞ্চিত হীনমন্যতা নিমেষে দূর হয়ে গিয়েছিল।
ভারতবাসী মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আবিষ্কার করেছিল: বিশ্বের সভ্যতা ভান্ডারে তাদের অবদান পাশ্চাত্যের চেয়ে কম নয়, বরং বেশীই।
এই উপলব্ধি যে এনে দিল, সমগ্র দেশের
তমোনিদ্রা যে ভেঙে দিল, সেই যাদুকরের মত মানুষটিকে বরণ করার জন্য গোটা দেশ
যখন অধীর আগ্রহে কম্পমান।
তাই স্বামীজী যখন কলম্বো এসে পৌঁছালেন,
দেখলেন, গোটা দেশে কৃতজ্ঞতা এক অভূতপূর্ব অভিনন্দন এর রূপ নিয়েছে। সেই
অভিনন্দনের ঢেউ তরঙ্গায়িত হয়ে বয়ে চললো রামনাদ, মাদ্রাজ, মাদ্রাজ থেকে
কলকাতার পথে সর্বত্র।
১৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতা পৌছলেন স্বামীজী। অভিনন্দনের পর অভিনন্দন – কলকাতা মাতাল হয়ে যায় তার বিশ্ববিজয়ী ছেলেকে নিয়ে।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘ প্রতিষ্ঠা
পাশ্চাত্যে অবিরাম বক্তৃতা আর ভ্রমণ, তার উপর সমগ্র দেশবাসীর ‘স্নেহের অত্যাচার’ – এসবের ফলে Swami Vivekananda র শরীর এবার ভেঙে পড়ল।কিন্তু তারই মধ্যে শ্রীরামকৃষ্ণ উপদিষ্ট পথে সন্ন্যাসী সংঘকে স্থায়ী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর চেষ্টা করলেন।
- স্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে মাদ্রাজে পাঠালেন শাখা কেন্দ্র গড়ে তুলতে।
- মুর্শিদাবাদের সারগাছিতে স্থায়ী সেবাশ্রম গড়ে তুললেন স্বামী অখন্ডানন্দ।
- অন্যান্য সন্ন্যাসী ভাইদেরও নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিলেন।
- স্বামী সারদানন্দ ও স্বামী অভেদানন্দের উপর যথাক্রমে আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের কার্যভার দিলেন।
রামকৃষ্ণ মিশন স্থাপন (Swami Vivekananda and Ramakrishna Mission)
১৮৯৭ খ্রীস্টাব্দের ১ লা মে স্বামীজি রামকৃষ্ণ মিশনের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা করেন।
বিদেশ থেকেই তাঁর চিন্তা ছিল ভাবি সংঘের জন্য গঙ্গাতীরে একটি স্থায়ী জমি কেনা। সেই স্বপ্ন সফল হল ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে।
৯ ডিসেম্বর, ১৮৯৮ বেলুড়ে শ্রী রামকৃষ্ণ মঠ স্থাপিত হল।আবার বিদেশ যাত্রা
১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন স্বামী
বিবেকানন্দ তৃতীয় বারের জন্য পাশ্চাত্য যাত্রা করেন এবং দুই সপ্তাহ
ইংল্যান্ডে থেকে আগস্ট মাসে আমেরিকা পৌঁছান।
আমেরিকায় এবার প্রায় এক বছর ছিলেন এবং ৯০ টির ও বেশী বক্তৃতা দিয়েছিলেন।
স্বামীজীর এবারকার প্রাশ্চাত্য ভবনের
মূল উদ্দেশ্য ছিল ওই সব দেশে তাঁর প্রতিষ্ঠিত কাজকর্ম কিরকম চলছে তা দেখাও
এবং তার ভিত্তি সুদৃঢ় করা।
প্যারিস, ভিয়েনা, কনস্টান্টিনোপল, এথেন্স ও মিশর হয়ে স্বামীজি ৯ ডিসেম্বর (১৯০০) বেলুড়মঠে (Belur Math) ফিরে আসেন।
মহাসমাধির পথে স্বামী বিবেকানন্দ
দেশে ফিরেই ২৭ শে ডিসেম্বর স্বামীজি মায়াবতী রওনা হন। সেখান থেকে ফেরেন 24 জানুয়ারি (১৯০১)।৬ ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রাস্ট ডীড রেজিস্ট্রি হয়।
১০ ফেব্রুয়ারি মঠের ট্রাস্টিদের অনুমোদনক্রমে স্বামী ব্রহ্মানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ এবং স্বামী সারদানন্দ সম্পাদক হন।
এইভাবে নিজেকে সংঘের সমস্ত কার্য পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিয়ে শেষ দু’বছর স্বামীজি মহাসমাধির জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন।
গুরুভাই কিংবা শিশ্যরা কোন পরামর্শ
চাইলেও তিনি দিতে চাইতেন না। তাদের নিজেদের বুদ্ধিমত কাজ করতে বলতেন, যাতে
তাঁর অবর্তমানে তাঁরা সংঘের পরিচালনায় ব্যাপারে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে
পারেন।
স্বামীজীর দেহত্যাগ মৃত্যু
Death of Swami Vivekananda
স্বামীজি মরদেহ ত্যাগ করেন 1972 খ্রিস্টাব্দের 4 জুলাই।
সন্ধ্যাবেলা বেলুড়মঠে নিজের ঘরে ধ্যান করেছিলেন। রাত ৯ টা ১০ মিনিটে সেই ধ্যানই মহাসমাধি তে পরিণত হয়।
মৃত্যু কালে স্বামীজীর বয়স হয়েছিল ৩৯ বছর ৫ মাস ২৪ দিন।
কিন্তু স্থূলদেহের নাশ হলেও যে শক্তি বিবেকানন্দ রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল, সূক্ষ্ম হবে তা কাজ করে চলেছে এখনও।
পৃথিবীর মানুষের কাছে স্বামীজি নিজেই দিয়ে গেছেন সেই প্রতিশ্রুতি: “এমনও
হতে পারে যে, এই শরীরটাকে পুরনো কাপড়ের মতো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে এর বাইরে
চলে যাওয়াই আমি শ্রেয় মনে করব। কিন্তু কখনো আমি কাজ থেকে বিরত হব না।
সর্বত্র আমি মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাব, যতদিন না প্রতিটি মানুষ বুঝতে
শেখে যে সে ভগবান।”
জাতীয় যুব দিবস (National Youth Day) / Swami Vivekananda Jayanti
স্বামী বিবেকানন্দ ও যুব সমাজ (Swami Vivekananda Youth Movement)
দেশের প্রগতি ও অগ্রগতির জন্য স্বামীজি যুবকদের মধ্যে শক্তির সঞ্চার করেন। এইজন্য প্রতিবছর 12 ই জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দেরজন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় যুব দিবস (Swami Vivekananda Jayanti / National Youth Day – 12th January) উদযাপন করা হয়।
স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষা চিন্তা
Swami Vivekananda on Education
বিবেকানন্দের মতে, শিক্ষা হলো
অভ্যন্তরীণ ব্রম্মা বা সত্তার বিকাশ বা পূর্ণতা লাভ। অর্থাৎ শিক্ষা হলো
ব্যক্তিমনের অন্তরতম সত্তার বহিঃপ্রকাশ।
শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন,Education is the manifestation of perfection already in man.
– Swami Vivekananda
বিশ্বজগতের জ্ঞানের ভান্ডার ব্যক্তিরূপ
সত্তার অন্তরের মধ্যে নিহিত থাকে তার শিক্ষা। তাঁর মতে জ্ঞান মানুষের
অন্তরের বিষয়। বাইরে থেকে শিশুর মধ্যে জ্ঞান সঞ্চালন করা যায় না।
এসম্পর্কে স্বামীজি একটি সুন্দর কথা
বলেছেন – চকমকি পাথর এর মধ্যে আগুন জ্বলার সম্ভাবনা আছে বলেই ঘর্ষণের ফলে
তারা জ্বলে ওঠে। আগুন বাইরে থেকে আসে না। শিক্ষক শিক্ষার সাহায্যে
শিক্ষার্থীর মধ্যকার জ্ঞানভান্ডার উন্মোচন করবেন। শিক্ষার্থীর মনের মধ্যেই
জ্ঞান সঞ্চিত আছে। যার প্রকাশের জন্য কোন অনুভাবনের প্রয়োজন।
সহজ কথায় বলা যায় যে, বিবেকানন্দের
শিক্ষা বিষয়ক মতাদর্শে জ্ঞান সহজাত। মানব অভ্যন্তরে তার অবস্থান। মানব
আত্মা হলো জ্ঞানের উৎস। শিক্ষার্থী আত্মর আবরণ উন্মোচন করে যা অনুভব করে,
তাই শিখে ও প্রয়োগ করে কারণ জ্ঞান তারই মধ্যে অবস্থিত।
স্ত্রী শিক্ষা
Swami Vivekananda on Woman Education
স্বামীজি স্ত্রী শিক্ষার ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি মেয়েদের জন্য গ্রামে গ্রামে
পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করে তাদের মানুষ করতে বলেছেন। মেয়েরা মানুষ হলে তবে
ভবিষ্যতে তাদের সন্তান সন্ততি দ্বারা দেশের মুখ উজ্জ্বল হবে। তিনি এজন্য
একদল ব্রহ্মচারিণী গঠন করতে বলেছেন, যারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে মেয়েদের
শিক্ষা দেবেন।
আমেরিকা ইংল্যান্ড এবং জাপানের মতো প্রগতিশীল দেশের প্রগতিতে তিনি নারীর বিশেষ ভূমিকা লক্ষ্য করেছেন।
ভারতবর্ষের নারীদের দুর্দশা দেখে তিনি
অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছিলেন। সমাজে নারীর স্থান অবমূল্যায়নের জন্য তিনি
অশিক্ষা কে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেছেন, যে দেশ নারীকে শ্রদ্ধা করে না সেই দেশ বা জাতি কখনো বড় হতে পারে না।There is no hope of rise for that family or country where there is no education of women, where they live in sadness. For this reason they have to be raised first.
Swami Vivekananda
জনশিক্ষা
Swami Vivekananda on Mass Education
স্বামী বিবেকানন্দ উপলব্ধি করেছিলেন
ভারতের মানুষের যথার্থ শিক্ষা ব্যবস্থা হল গণশিক্ষা। তিনি আরো মনে করতেন
জনগণের প্রতি অবহেলা হলো আমাদের পতনের প্রধান কারণ।
মানুষের প্রথম প্রয়োজন খাদ্য এবং শিক্ষা। এই দুটো জিনিস না থাকলে রাজনীতি দিয়ে কোন লাভ হবে না।
স্বামীজি ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন,
“সর্বাঙ্গে রক্ত সঞ্চালন না হলে কোন দেশ কোন কালে কোথাও উঠেছে দেখেছিস?
একটা অঙ্গ পড়ে গেলে, অন্য অঙ্গ সবল থাকলে ওই দেহ নিয়ে কোনো বড় কাজ করা
যাবে না – এ নিশ্চই জানবি।”
আধুনিক শিক্ষা মুষ্টিমেয় কে আলোকিত
করে। তাই শিক্ষাকে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে আপামর
জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা স্বামীজি বলেছেন।
বিবেকানন্দ শিক্ষিত যুবকদের গ্রামে গিয়ে দেশের লোকদের আধুনিক বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল, সাহিত্য, ধর্ম শিক্ষা দিতে বলেছেন।উপসংহার
ভারতবর্ষের নবজাগরণের প্রতিটি ক্ষেত্রকে
স্বামীজি বিরাট ভাবে প্রভাবিত করেছেন। সমগ্র পৃথিবীর জন্য রেখেছেন অমূল্য
পথনির্দেশ। অনেক মনীষীই তাকে আধুনিক ভারতের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন।
এ প্রসঙ্গে চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারীর উক্তি স্মরণীয়: “আমাদের
আধুনিক ইতিহাসের দিকে তাকালে যে কেউ স্পষ্ট দেখতে পাবেন – স্বামী
বিবেকানন্দের কাছে আমরা কত ঋণী। ভারতের হাত তোমার দিকে ভারতের নয়ন তিনি
উন্মীলিত করে দিয়েছিলেন। তিনি রাজনীতির আধ্যাত্বিক ভিত্তি নির্মাণ
করেছিলেন। আমরা অন্ধ ছিলাম, তিনি আমাদের দৃষ্টি দিয়েছেন। তিনি ভারতীয়
স্বাধীনতার জনক – আমাদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার
তিনি পিতা।”
0 Comments