পূর্ণকুম্ভের অনুসরণে যুগবতার শিবকল্পতরু শ্রী শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ এর প্রবর্তিত ১৯৫৭ সাল থেকে প্রতি তিন বছর অন্তে— বাংলাদেশে একমাত্র চট্টগ্রামস্থ বাঁশখালী ঋষিধাম আশ্রমে ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা সাধু-সন্ন্যাসী, লক্ষ লক্ষ ভক্তদের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিংশতম ঋষি কুম্ভ ও কুম্ভমেলা । আগামী ৩১ জানয়ারী-২০২০ হতে ৯ ফেব্রæয়ারী-২০২০ ১০ দিন ব্যাপী উক্ত সমগ্র অনুষ্ঠান পুরোহিত্য করবেন মানসপুত্র ও ধর্মের ভক্তির প্রদীপ ঋষিধাম ও তুলসীধাম মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী সুর্দশনানন্দ পুরী মহারাজ । ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলার মত একটি বৃহৎ ধর্মীয় মিলনমেলা বড়লোক থেকে গরীব,ভিখারি, ভেদাভেদ ভুলে দুঃখ-কষ্টকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে মিলিত হয়। কুম্ভ শব্দটির অর্থ কলস বা কলসি এবং মেলা শব্দটির অর্থ একটি স্থানে বহু মানুষের উপস্থিতি। কুম্ভ বা কলসি হল দেবদেবীর দিব্য উপস্থিতিময় ঋষিকুম্ভের মুখে উন্মুক্ত অংশটি বিষ্ণুময়। ঋষিকুম্ভের কন্ঠদেশ রুদ্রময় যা ব্রহ্মাস্বরূপ কুম্ভমেলায় অধিষ্ঠান করেন সব দেবদেবীগন। শ্রী শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ বলতেন-মানুষের শরীর কুম্ভস্বরূপ, প্রাণস্বরূপ আত্মাকে ধারণ করে সর্বরূপ পৃথিবী। আর ও ধারণ করে অমৃত রূপ কালকে।সমুদ্র, নদী, পুকুর, কৃপ,সবাই কুম্ভের কলসের প্রতীক। মহাবিশ্বকে যেভাবে সূর্য আলো দেয় এবং বায়ু আকাশকে ঘিরে থাকে। সেইভাবে মানুষের দেহকোষ দ্বারা আবৃত। মানবদেহ লয় প্রাপ্ত হয়। পঞ্চভূতে স্থিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম।আত্মা আমি কে কোথা থেকে আসলাম কোথায় যাব, জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে মোক্ষলাভের আশায় অমৃত কুম্ভে পূর্ণতা লাভ করে। ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা তিন প্রকার ১। পূর্ণকুম্ভ ২। অর্ধকুম্ভ ৩। মহাকুম্ভ।
ধর্ম-ঈশ্বর ভক্তির বাহিরে ঋষিধাম আশ্রমের ঋষিকুম্ভ ও
কুম্ভমেলা জীবন সুধায় পরিপূর্ণ। ভক্তদের বিশ্বাস
ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলায় যেতে পারলে পূর্ণ তীর্থ লাভ
হয়, পাপ ক্ষয় হয়, মুক্তি লাভ হয়। ভক্তরা দুঃখ কষ্টকে ভুলে,
মুক্তিলাভের আসায় ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলায় সাধু-
সন্ন্যাসী ও ভক্তদের মহামিলন মেলায় মিলিত হন। মনের
সাগর মন্থনে উঠে আসা অমৃত,“পাদোহস্য
ভারতে কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয় হরিদ্বার, এলাহাবাদ, প্রয়াগ, নাসিক ও উজ্জয়নী বাংলাদেশে একমাত্র ঋষিধাম আশ্রমে। ভারতে প্রতি ৩ বছর অন্তে অর্ধকুম্ভমেলা হয়, প্রতি ১২ বছর অন্তে পূর্র্ণকুম্ভমেলা হয় । ১২ বছর পর পর ১২টি পূর্ণকুম্ভ হলে ১৪৪ বছর পর মহাকুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় অসংখ্য মহাপুরুষ, সিদ্ধ পুরুষ, সাধু- সন্ন্যাসীদের মহাসংযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের এই অমৃতময় কুম্ভমেলারূপী ধর্মযজ্ঞের শিবাবতার আচার্য শঙ্কর নবরূপ দান করেন। শাস্ত্র অনুসারে তীর্থ তিন প্রকার। ভৌমতীর্থ, জঙ্গমতীর্থ ও মানসতীর্থ। প্রকৃতিগতভাবে আধ্যাত্মিকরূপে শুদ্ধ এবং মুনি-ঋষি সাধুদের তপক্ষেত্র তা হল ভৌমতীর্থ। ধর্ম নিন্ঠ তপঃ শাস্তি সম্পন্ন বস্তুবিদ মহাত্মাগণ হলেন সচল জঙ্গমতীর্থ এবং সাধুসন্তের মানসের দিব্যভাব যার দ্বারা চৈতন্য ঘটে। ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা স্নানে সাধু দর্শন, স্নান, তর্পণ করে নিজ ক্ষমতা অনুসারে দান করলে দেবতা ও পিতৃপুরুষগণ অতীব প্রসন্ন মানুষের আত্মা উচ্চগতি ও মুক্তিলাভ হয়। মহাত্মাপূর্ণ ও শুভ ফলদায়ক এই অমৃতময় মহাপূণ্য ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলার কুম্ভযোগে মানুষের মন থেকে পবিত্র শুদ্ধ-
পাপমুক্ত হয়ে মুক্তিলাভ করে। শুধুমাত্র বিশ্বাস নয় একাধিক পুরাণে এই বর্ণনা পাওয়া যায়। তাই যুগ যুগ ধরে হিন্দু নর-নারীগণ কুম্ভমেলায় মিলিত হয়, মুক্তি কামনা, স্নান করেন। ত্রিতীর্থের স্থানে তিনিটি অমৃতময় ধারা যেমন স্বমহিমায়, মহিমান্বিত-চির শাশ্বত চির উজ্জ্বল। ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা শিশির ভেজা, কুয়াশা ঘেরা রাত নিয়ে কোন ভক্তরা অনিশ্চিত রাত জেগে থাকে থাকেন লক্ষ লক্ষ ভক্ত ঋষিধাম আশ্রমে। যার জ্ঞান নেই সে পাপ পূণ্যকে নিজের বলে ভুল করে সর্বব্যাপী পথ আমাদের এই পাপ-পূণ্যের বোধকে স্বীকার করি না। অজ্ঞানে আচ্ছন্ন হয়ে আমরা আমাদের অন্তরস্থিত আত্মায় এই মুক্তভাব বুঝতে পারিনা। যে অসীম উন্মাদনায় আর ভক্তিতে মানুষ ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলায় দলে দলে গিয়ে ধর্মের মুখ্য আচরণ লাভ করে পাপ-পূণ্যের ভাবনা হৃদয়ে জাগরণ করে উত্তর। ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলায় প্রসাদ পাবার জন্য সারি সারি ভক্ত বসে রোজ হাজারো ভক্ত প্রসাদ পেয়ে থাকেন। ধুলোবালিতে পূণ্য উড়ছে ঋষিধামের আশ্রমের চারপাশে মিলে ৪০ একর এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে মেলায় ধর্মপ্রাণ ভক্তরা। সমাজ সংসারে থাকলে মানুষ নীতিবোধ থেকে সরে আসে না। সর্বচরিত্রকে মহাকাশে যাতে আদর্শকে ব্যাখ্যা করা যায় কুম্ভের ভক্তদের মধ্যে। তাই ধর্মের তত্তে¡র মাঝে ও পূর্ণ কুম্ভে ও পূণ্যতা পাওয়া যায়।জন্ম আর মৃত্যু, পাপ আর পূণ্য, দান আর ভিক্ষার মাঝখানে থেকে যায় অমৃতের কল্যাণ। ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলায় অমৃতের উপাখ্যাণ রচিত হয়।ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলায় প্রকৃতপক্ষে চতুবর্গ ফল দান করে। অর্থাৎ ধর্ম, অর্থ,কাম ও মোক্ষলাভ হয়ে থাকে। প্রাণপুরুষ, সিদ্ধপুরুষ, সাধু-সন্ন্যাসী দর্শনে
পূর্নাত্মা আধ্যাত্মিক অমৃতময় ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলায় মহিমা।শ্রী শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজের অমৃত কথাবাণী স্বরূপ ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলা উপলক্ষে প্রার্থনা অনুষ্ঠানে শ্রীমৎ স্বামী সুর্দশনানন্দ পুরী মহারাজ
সুমধুর কন্ঠে ভক্তদের বলেন, “গুরুমহারাজ” দেবলোক থেকে দেবতাগণ হিমালয় থেকে ঋষি-মুনিঋষিগণ বহু প্রাচীন সাধুসস্তগণ সুক্ষè শরীরে উপস্থিত থেকে তাদের দিব্যদৃষ্টি দিয়ে ভক্তদের দেখেন। মঙ্গলময় দিব্যদৃষ্টি দিয়ে ভক্তদের আর্শিবাদ দান করেন।প্রতিটি ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলায় ছদ্মবেশে মহাপুরুষগণ অনেকটা ভিখারি রূপ ধারণ করে কুম্ভ মেলার স্থলে বিভিন্ন রূপে রূপ ধারণ করে বিচরণ করেন। তাদের কেউ চিনিতে পারে না। তোমরা ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলায় কোন ভিখারী বা কুৎসিত দৃশ্য কোন ব্যক্তিকে অবহেলা করিবে না। সকলকে হাত জোর করিয়া প্রণাম জানাইবে। এইরূপে সকলকে সম্মান করলে সকলে আর্শিবাদ প্রাপ্ত হবে।
গুরু তোমায় প্রণাম
গুরু তোমায় প্রণাম
0 Comments